আজকে আমি দ্বিতীয় বারের মতো আমার ফাইভারে সফলতার গল্প লিখতে যাচ্ছি। প্রথম বার লিখেছিলাম যখন আমি ফাইভারে টপ রেটেড ব্যাজ পেয়েছিলাম। সফলতার গল্প লিখতে গেলে আমার প্রথম যেই কথাটি মনে পরে সেটা হচ্ছে "সাফল্যের জন্য কোন শর্টকাট নেই”। আজকে এই গল্পে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার সাফল্যের পেছনে কতটা পরিশ্রম, ত্যাগ এবং একনিষ্ঠতা লুকিয়ে রয়েছে। পথে অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু প্রতিটি বাধাই আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমি আমার গল্প কয়েকটি পয়েন্টে লেখার চেষ্টা করবো যেন প্রতিটি পয়েন্ট থেকে আপনারা কিছু না কিছু শিখতে পারেন।
আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের স্বপ্ন প্রথম দেখা ২০১৩ সালে। আমার কলেজে কিছু সিনিয়ররা ফ্রিল্যান্সিং করতেন। আমার প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা ছিল, তাই ফ্রিল্যান্সারদের কাজের স্বাধীনতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং আমার জীবনেও এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম।
২০১৪ সালে আমি ফাইভারে আমার প্রোফাইল তৈরি করেছিলাম, কিন্তু তখন আমার কোনো স্কিল ছিল না, এমনকি যোগাযোগের স্কিলও ছিল না। আমি প্রচুর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু স্কিল না থাকার কারণে কিছুই অর্জন করতে পারিনি। তারপর আমি আমার স্কিল ডেভেলপ করতে শুরু করি, তবে সঠিক গাইডলাইন এবং ধারাবাহিকতার অভাবে অনেক সময় আমি পথ হারিয়ে ফেলতাম। এভাবে প্রায় ৪ বছর চলে যায়।
কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে যোগ দেই এবং আমার কর্ম জীবন শুরু করি।চাকুরীতে যোগ দেওয়ার কারণে স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা পুরোপুরি থেমে যায়।
দুই বছর পর আমি বুঝতে পারি যে, আমি এই চাকুরী পছন্দ করছি না। তাই আমি আবার আমার স্কিল ডেভেলপ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিই। আমি একদিকে আমার চাকুরী করতাম, অন্যদিকে অবসর সময়ে নতুন কিছু শিখতে প্রচুর পরিশ্রম করতাম। আমি প্রতিদিন এক মুহূর্তও অবহেলা করে নষ্ট করতাম না। আমি সর্বদা চেষ্টা করতাম শিখতে এবং প্র্যাকটিস করতে।
২০১৯ সালে আমি আমার পুরনো ফাইভার অ্যাকাউন্টটি নতুন স্কিলের সাথে আবার সাজাই। একটি নতুন গিগ তৈরি করি, কিন্তু তখন আমি খুব বেশি আশাবাদি ছিলাম না। আমি পূজার ছুটিতে গিয়েছিলাম, এবং ফিরে এসে দেখি আমার গিগে একটি অর্ডার এসেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমি অলরেডি ৫ দিন দেরি করে ফেলেছিলাম ছুটিতে থাকার কারণে। তারপর আমি ক্লায়েন্টকে মেসেজ করি এবং খুব সহজ একটি সমস্যার সমাধান করার পর তিনি আমাকে ৫ স্টার রেটিং দেন।
তখন আমি বুঝতে পারলাম, আমি কী অর্জন করেছি! এরপর থেকে আমি প্রতিদিন আমার ফাইভার প্রোফাইলে একটিভ থাকতাম এবং স্কিল ডেভেলপ করার জন্য আরও বেশি সময় বিনিয়োগ করতে থাকি। তারপর থেকে আস্তে আস্তে নতুন নতুন অর্ডার পেতে শুরু করি এবং চাকুরীর পাশাপাশি আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।
ফাইভার এবং চাকুরী একসাথে প্রায় ৫/৬ মাস চালিয়ে যাওয়ার পর আমি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ফাইভারে কাজ শুরু করি। ফাইভারে পুরোপুরি কাজ শুরু করার পর আমি আরও বেশি অর্ডার পেতে শুরু করি। সবকিছু খুব ভালোভাবে চলছিল এবং আমি খুব তাড়াতাড়ি LEVEL ONE BADGE পেয়ে যাই।
তারপর একদিন, আমি রিভিউ ম্যানিপুলেশনের জন্য একটি ওয়ার্নিং পাই।
আমি ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তিনি আমাকে ৪ স্টার রেটিং দিয়েছেন, কিন্তু আমি জানতাম না যে, ৪ স্টার রেটিং আসলে খারাপ নয়। 😅 এরপর আমি ফাইভারের শর্তাবলী সম্পর্কে আরও বেশি সতর্ক হই এবং নিয়মিত ফাইভারে শর্তাবলি সম্পর্কে নিজেকে আপডেট রাখতে চেষ্টা করি।
আমি ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করি কীভাবে আমার ক্লায়েন্টদের সঠিকভাবে সেবা দিতে হয় এবং কীভাবে তাদের খুশি রেখে তাদের চাহিদা পূরণ করতে হয়।ফাইভারে আমার ক্লায়েন্টরা আমার কাছ থেকে যেসব সার্ভিস বেশি চাইতো আমি সেই সার্ভিস আমার গিগে এড করার চেষ্টা করতাম। এর পর LEVEL TWO BADGE পাই এবং আমার বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট আমার সার্ভিসে খুশি ছিলেন।
টপ রেটেড সেলার হওয়ার সমস্ত শর্ত পূর্ণ করার পর আমি ফাইভারের Seller Plus প্রোগ্রামে যোগ দিই। আমার সাকসেস ম্যানেজার আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন এবং তিনি আমাকে অনেক নতুন নতুন ধারণা দিয়ে সাহায্য করেছেন, যা আমার ব্যবসা এবং সেবা আরও উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে। তিনি আমাকে ফাইভারে আমার ব্র্যান্ড তৈরি, কনভার্শন রেট এবং এভারেজ সেলিং প্রাইস বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন। প্রায় এক বছরের জন্য আমাকে টপ রেটেড ব্যাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর, অবশেষে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত টপ রেটেড ব্যাজটি পাই এবং এটি সত্যিই এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি ছিল।
তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমি আমার ক্লায়েন্টদের ফিডব্যাক থেকে শিক্ষা নিয়ে আমার গিগ এবং আমাকে প্রতিনিয়ত ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন আমার ২ জনের ছোট একটা টিম আছে। তাদের সাথে নিয়ে খুব ভালোভাবেই আগাচ্ছে আমার ফাইভার জার্নি।
নতুন সেলাদের জন্য কিছু টিপস (আমার প্রতিটি ভুল আপনার জন্য একটি শিক্ষা):
- আপনার রোডম্যাপ তৈরি করুন। সময় নিন, কিন্তু ধারাবাহিক থাকুন।
- আপনার স্বপ্ন অনুসরণ করুন।
- ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকুন।
- ফাইভারের নিয়ম মেনে চলুন। যদি নিয়ম না জানেন, তবে শিখুন।
- কম নিন, বেশি দিন। ক্লায়েন্টের কাজের প্রতি একটু বেশি পরিশ্রম করুন। ক্লায়েন্টের কাজ আপনার নিজের কাজ মনে করুন। ক্লায়েন্টদের অর্ডার দ্রুত শেষ করার জন্য তাড়াহুড়া করবেন না, তাদের পর্যাপ্ত সময় দিন।
- কঠোর পরিশ্রম করুন এবং কখনো আশা হারাবেন না। কোন সাফল্যই পরিশ্রম ছাড়া অর্জন করা যায়না।
আমার এই সফলতার গল্প লিখতে আমাকে উদ্দীপ্ত করার জন্য আমি আমাদের ফাইভারের সাবেক কমিউনিটি লিডার এবং বর্তমানে ফাইভারের কমিউনিটি ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নীল ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে আমি প্রতিনিয়ত ফাইভার এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে নতুন কিছু শিখছি। নীল ভাইয়া শুধু একজন ভালো পরামর্শদাতা নন, তিনি আমাদের কমিউনিটি এবং ব্যক্তিগত উন্নতির প্রতি তার অনেক আগ্রহ এবং আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের কমিউনিটি নিয়ে অনেক কিছু করেছেন, আমাদের একত্রিত করে সবসময় নতুন সুযোগ এবং উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার অনুপ্রেরণায় আমরা আরও ভাল করতে শিখেছি এবং আমাদের কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
আশা করছি, আমরা আমাদের কমিউনিটিকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং নতুন সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবো। আমাদের এই কমিউনিটি একে অপরকে সহায়তা এবং প্রেরণা দেওয়ার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হবে, যা সবার জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করবে।
হ্যাপি ফাইভার ফ্রিল্যান্সিং! 😍
Inspired by Supto's journey? Visit his Fiverr profile to explore his work and see how he does it.