Fiverr Community
+00:00 GMT
Clubs
/
Bangladesh
/
Content
Sellers in the news
May 6, 2025

একটি ক্লিক থেকে রিমোট এজেন্সি পর্যন্ত: ফাইভারে স্বপ্নের ৭ বছর

একটি ক্লিক থেকে রিমোট এজেন্সি পর্যন্ত: ফাইভারে স্বপ্নের ৭ বছর
# Seller Story
# Bangladesh

২০১৮ সালে ফাইভারে একা শুরু করে ৩৫+ সদস্যের রিমোট এজেন্সিতে রূপান্তরিত হওয়ার গল্প

web_design_work
web_design_work
একটি ক্লিক থেকে রিমোট এজেন্সি পর্যন্ত: ফাইভারে স্বপ্নের ৭ বছর
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতার পেছনে একটা দীর্ঘ, কঠিন যাত্রা থাকে—যেটা অনেকেই দেখতে পান না। যখন সফলতার ছোঁয়া পাওয়া যায়, তখন তার শুরুটা গল্পের মত মনে হয়। এখন যখন পেছনে তাকাই, মনে হয় যেন এক দীর্ঘ, কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েছি—একটা পথ যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সংগ্রাম, চ্যালেঞ্জ, আর আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা।
২০১৮ সালে এমনই এক কঠিন বাস্তবতা দিয়ে শুরু হয়েছিলো আমার ফাইভারের যাত্রা। আমার ৭ বছরের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার গল্প শুধুমাত্র গল্প নয়, এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য হারানো রাত, এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার বাস্তবতা। কিন্তু আজ যখন আমি পেছনে ফিরে দেখি, আমি বিশ্বাস করি—ফাইভার আমার জন্য এক অদ্বিতীয় সঙ্গী ছিল। আমি আজ যেখানে আছি, সেটা ছিল শুধু আমার, আমার টিমের পরিশ্রম এবং এই প্ল্যাটফর্ম আর কমিউনিটির অবিশ্বাস্য সাহায্যের ফল। এই বিশাল কমিউনিটির সাহায্য, আর ফাইভারের সেলারদের প্রতি এত গুরুত্ব না থাকলে হয়তো আমাদের এই নতুন পথের যাত্রা এত মসৃণ হত না।
আমি সাইফুল, আর আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা শুরু হয়েছিল একেবারে ছোট্ট এক সিদ্ধান্ত থেকে। ২০১৮ সালে, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময়ে আমি UI/UX ডিজাইনের কোর্স করে “web_design_work” ইউজারনেমে আমার প্রথম ফাইভার একাউন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
শুরুতে সব কিছুই খুব সহজ মনে হয়েছিল, ছোট ছোট প্রজেক্টে কাজ করে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করছিলাম। তখন মনে হচ্ছিলো গতানুগতিক ক্যারিয়ারের পেছনে না ছুটে এখানেই আরো ফোকাস দেওয়া প্রয়োজন। তবে, খুব দ্রুত বুঝতে পারি, যদি বড় কিছু করতে চাই, তাহলে একার পক্ষে সম্ভব না।
তখনই আমার একজন অভিজ্ঞ ডিজাইনার ও ডেভেলপার- আজিজুল হাকিম ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। আজিজুল ভাইও তখন ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত অবস্থায় দিন পার করছিলেন। ফাইভার নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে আমরা একসাথে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন আমরা দুজনেই নানাবিধ বাধা অতিক্রম করে, ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও একসাথে ভিন্ন কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। সেই থেকে শুরু হয় আমাদের ফাইভারের যাত্রা, যা আজকে এত দূর চলে আসবে আমাদের কল্পনাতীত ছিলো।
ফাইভারের প্রতিযোগিতা তখন ছিল তীব্র। আমরা কিভাবে আমাদের ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করব, কিভাবে আমাদের গিগ সাজাবো, কিভাবে নিজেকে প্রমাণ করব—এগুলো আমাদের কাছে একেবারেই অজানা ছিলো। কিন্তু ফাইভারের লেভেল সিস্টেম আর অনলাইন টুলস আমাদের সেই পথকে মসৃণ করে দিয়েছিল।
আমরা যখন প্রথম লেভেল ১ থেকে লেভেল ২-এ পা রাখলাম, তখন মনে হয়েছিল যেন স্বপ্ন সত্যি হতে শুরু করেছে। এই সময়গুলোতে ফাইভারের বিভিন্ন ট্যুল যেমন প্রোফাইলে ভিডিও যোগ করা, মাইলস্টোন পেমেন্ট অফার করা, সাকসেস স্কোর আমাদের ক্লায়েন্টদের সাথে আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
ইতিমধ্যে আমরা তখন একটি ছোট টিম গঠন করি, এবং প্রথমে ১ জন UI/UX ডিজাইনার হায়ার করি। এরপর আমার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আজিজুল ভাইয়ের দীর্ঘ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের টিমকে দ্রুত শক্তিশালী করে তোলে আর শুরু হয় আমাদের সম্পূর্ন রিমোট এজেন্সী- Oyolloo-র যাত্রা। এছাড়াও ফাইভারের হেল্পফুল কমিউনিটি থেকে আমরা যে সাহায্য পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
২০২০ সালে আমরা "Top Rated Seller" হিসেবে ফাইভারের সম্মানিত তালিকায় স্থান পাই। তবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে চমকে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে ২০২২ সালের অক্টোবরে। আমরা একদিন ফাইভার থেকে একটা টপ প্রফেশনাল মিট-আপের ই-মেইল পাই। শুরুতে আমরা তেমন গুরুত্ব দেইনি, এমনকি মিট-আপের দিন আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম ইভেন্টের কথা। সেদিন মোঃ জাহিদুল ইসলাম ভাই, যিনি তখন ফাইভারের কমিউনিটি টিম লিডার ছিলেন, আমাদের কল করেন, এবং ইভেন্টে দ্রুত যেতে বলেন। ইভেন্টে গিয়ে আমরা পুরোদমে আশ্চর্য হয়ে যাই। আমরা দেখি ফাইভার থেকে আমাদের গিগ ফিচার করা হয়েছে, আর আমরা হয়েছি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করা টপ সেলার। এই মুহূর্তটা ছিলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত। তখন মনে হচ্ছিলো, জীবনের সেরা অর্জন আমরা পেয়েছি।
আমরা কখনোই ভাবিনি যে আমাদের ছোট্ট পদক্ষেপগুলো একদিন এমন এক বিশাল অর্জনে পরিণত হবে। এই অর্জনের পিছনে অন্যতম বড় কারণ ছিল আমাদের “No Compromise on Quality”, “Proper Pricing Strategy” এবং আমাদের টপ রেটেড স্ট্যাটাসে পৌঁছানোর পর ফাইভারের আর্লি পে-আউট এবং প্রায়োরিটি সাপোর্টের মত এক্সক্লুসিভ সুবিধাগুলো। এছাড়াও আমাদের ফাইভারের যাত্রায় জাহিদুল ইসলাম ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য, যেকোনো প্রয়োজনে, যেকোনো সময়ে আমরা সবসময় তাকে পাশে পেয়েছি। জাহিদুল ভাই বর্তমানে ফাইভারের কমিউনিটি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তার অমায়িক আচরণ, প্রতিটি ক্ষেত্রে তার গাইডেন্স, আর সাহায্য ছাড়া আমাদের এত দূর আসা সম্ভব হত না। এছাড়াও এস এম মেহেদী হাসান ভাইয়ের সহযোগিতাও আমাদের অনেক কঠিন সময়ে আলো দেখিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার।
এরপর আমরা আমাদের ক্লায়েন্ট প্রজেক্টগুলো শুধু ডিজাইন নয়, ডেভেলপ করেও ডেলিভার করতে থাকি। ধীরে ধীরে সার্ভিস বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টি এবং কমিউনিকেশন—এই দুই জিনিসকে আমরা সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছি। সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের সার্ভিস আরো বৃদ্ধি করে—গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোশন গ্রাফিক্স, ভিডিও এডিটিং, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট রাইটিং এবং আরও অনেক কিছু যুক্ত করি। এই সবকিছুতে আমাদেরকে ফাইভার কমিউনিটির অন্যান্য অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা অনেক সাহায্য করেছিলেন। কিভাবে ক্লায়েন্ট যোগাযোগ উন্নত করতে হয়, এবং অর্ডার পরিচালনা করার বিভিন্ন পরামর্শও আমরা প্রায়শই তাদের সাথে আলোচনা করে নিতাম।
এত দীর্ঘ পথের গল্প শুনতে সহজ মনে হয়, তবে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং অঙ্গীকারের কারণেই আজ আমরা দুইজন থেকে Oyolloo-র ৩৫+ সদস্যের একটি শক্তিশালী রিমোট টিম তৈরি করতে পেরেছি, যারা প্রতিদিন ক্লায়েন্টদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়ালি আমরা এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি, যার সাহস এবং প্রেরণা আমরা পেয়েছি আমাদের সেই ছোট্ট সিদ্ধান্ত, আর কিছু মানুষের বিরামহীন পাশে থাকার কারণে।
বর্তমানে আমাদের বিস্তৃতি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে পর্তুগাল পর্যন্ত পৌঁছেছে—এটা কেবলমাত্র ফাইভারের সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৪৫০০+ টি অর্ডার সম্পন্ন করেছি, তাদের মধ্যে একজন ক্লায়েন্ট শুধু আমাদের কাছ থেকে ৭৫,০০০ ডলার এরও বেশি মূল্যের ল্যান্ডিং পেজ এবং ইউজার-ফোকাসড ডিজাইনসহ আরো অনেক সার্ভিস নিয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে আমাদের ৯৮% রিটার্নিং ক্লায়েন্ট আছে- যা শুরুতে আমাদের জন্য কল্পনাতীত ছিলো।
এই সময়ে এসে পেছনে ফিরে তাকালে অবাক লাগে, যেখানে আমাদের শুরুটা ছিলো অনিশ্চিতয়তায় পরিপূর্ন, সেখানে আজ আমরা এত বড় টিম নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে, আমরা যে বিশাল একটি টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছি, এবং আমাদের মাধ্যমে অসংখ্য অদম্য তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে—এটা আমাদের জন্য এক গভীর গর্বের অনুভূতি। যখন দেখি আমাদের ছোট্ট উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে, তখনই বুঝি সত্যিকারের সাফল্য কী।
এই গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এটা শুধু শুরু। ফাইভারের মাধ্যমে আমরা এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছি, যেখানে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সৎভাবে কাজ করার শক্তি পেয়েছি। ফাইভার আমাদেরকে যে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে, তা শুধু আমাদের প্রফেশনাল জীবন বদলে দেয়নি, ব্যক্তিগত জীবনেও এনেছে স্থিরতা, সম্মান এবং এক আত্মবিশ্বাস। আগে যারা আমাদের নিয়ে সন্দিহান ছিলো, তারাই এখন আমাদের নিয়ে গর্ব করে, আমাদের কাছে পরামর্শ চায়—এগুলো আমাদের প্রাপ্তি।
আমি বিশ্বাস করি, ফাইভারের মাধ্যমে সৎভাবে পরিশ্রম করে, প্রতিটি ক্লায়েন্টের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করলে, একদিন তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা শুধুমাত্র আমাদের কঠোর পরিশ্রম আর ফাইভারের অমিত সহায়তার কারণে। তাই নতুনদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে, হাল ছেড়ো না। ফাইভারের কমিউনিটির সাহায্যে, নিজেদের সততা আর নিষ্ঠা থাকলে সফলতা ধরা দিতে বাধ্য।
ধন্যবাদ ফাইভার এবং ফাইভার কমিউনিটিকে, আর ধন্যবাদ সেই সকল ক্লায়েন্টদের যারা আমাদের ওপর ভরসা রেখেছেন। আমরা স্বপ্ন দেখি, একদিন ফাইভারকে সাথে নিয়ে আমরা এন্টারপ্রাইজ লেভেল সার্ভিস প্রদান করবো। সেই স্বপ্নের পথে, আমাদের যাত্রা চলতে থাকবে—আরও বহু দূর!
Inspired by Saiful's journey? Visit his Fiverr profile to explore his work and see how he does it.
Comments (24)
Popular
avatar

Dive in

Related

1:19
video
বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লাবে সবাইকে আন্তরিক স্বাগতম! আপনাদের কমিউনিটি ম্যানেজার এর পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছাবার্তা।
By sophiseguin • Mar 24th, 2025 Views 444